- মৃত্যুর পরে কী?
- সেটা তো জীবিতদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়
- সত্যি কি তাই?
- মানে? আপনি কী বলতে চাইছেন?
- কিছু বলতে চাইছি না, প্রশ্ন করছি।
- এর জবাব তো সবাই জানে, ধার্মিক হলে, মানে সব ধর্মেই তো মৃত্যুর পরের সময় নিয়ে বেশ কিছু ব্যাখ্যা আছে।
- হুঁ, আমি আপনার মন্তব্য শুনতে চাই, যেমন মৃত্যুর পরের জগতে কেউ কি চাইলে জীবিত থেকেও যোগাযোগ করতে পারে?
- ব্যাপার কী? এরকম অদ্ভূত একটা বিষয় নিয়ে আপনি কথা বলছেন হঠাত? এ ব্যাপারে আপনার কি কোন থিওরি আছে? আপনি তো যথেষ্ট যুক্তিবাদী মানুষ বলেই জানি সাদী ভাই।
- বটেই, তবে সেদিন মরফুন, মানে মফু ফকিরকে নিয়ে জানতে চাইছিলে না? এই যে সে মৃত আত্মা বা অন্য সব অলৌকিক শক্তির সাথে কথা বলতে পারে বলে দাবী করে সেটা আসলে কী?
- হ্যাঁ
- তার থিওরিটা বলছি, বিশ্বাস করা না করা তোমার ব্যাপার। দেখো, মানুষ- বা শুধু মানুষ কেন কোন জীবিত প্রাণিই একসময় পৃথিবীতে ছিলো না, রাইট?
- হ্যাঁ
- এবং তারা কেউই একসময় পৃথিবীতে থাকবে না।
- হ্যাঁ, কোন সন্দেহ নেই।
- আর সবাই কিন্তু পৃথিবীতে বেশ কিছু ধাপ পার করে আসে, যেমন একটা গাছ ফলের বীজ থেকে মাটিতে আসে, চারা গাছ হয়, বড় হয়ে বৃক্ষ, গুল্ম ইত্যাদি হয়, আবার মরে গিয়ে পঁচে যায়, তার আগে সাইকেল চালু রাখতে মাঝে আরো কিছু বীজ দিয়ে যায়।
- হ্যাঁ
- পাখি হবার আগে থাকে ডিম, আর মানুষ বা ইত্যাদি স্তন্যপায়ী প্রাণিরা থাকে ভ্রুণদশায়, মায়ের পেটে- তাইতো?
- হ্যাঁ, আপনি আসলে কী…
- বলছি। আপনার নিজের কথাই ভাবুন, আপনি আপনার মায়ের পেটে ছিলেন অন্তত দশ মাস।
- কোন সন্দেহ নাই
- রাইট, কিন্তু তার কোন স্মৃতি কি আপনার আছে?
- না,থাকার কথাও না, কারোর ই নেই।
- কিন্তু আপনি যে আপনার মায়ের পেটে ছিলেন সেটা কিন্তু অন্য সবার; মানে তখন যারা পৃথিবীতে ছিল তাদের মনে আছে, আপনার মা, বাবা মানে যারা যারা দেখেছেন, এমন কি মেডিক্যাল টেস্ট এ চাইলে সেসময়ের ছবি তুলে আপনাকেও দেখা গেছে।
- হ্যাঁ
- মফুর মতে মায়ের পেট বা ভ্রুণদশা যেমন একটা ধাপ, এই পৃথিবী যেমন আরেকটা, মৃত্যুও তেমনি এরকম একটা দশা ছাড়া কিছুই না। মায়ের পেটে থেকে আপনি যেমন পৃথিবী কেমন তা বুঝতে পারতেন না, তেমনি আমরাও মৃত্যু কেমন তা বুঝতে পারি না, মানুষ পরের ধাপটা আগে থেকে আঁচ করতে পারে না। কিন্তু-
- কিন্তু?
- কিন্তু আগের ধাপটা পারে, যেমন আপনি যে গর্ভে ছিলেন তা পৃথিবীর অনেকেই জানে ও মনে করতে পারে।
- তার মানে, তার মানে?
- হ্যাঁ, তার মতে মৃতদের জগত থেকে চাইলে আত্মারা আমাদের দেখতে পারে, শুনতে পারে। আমরা তাদের দেখি না, মৃতদের জগত থেকে তারা কেউ কেউ আমাদের পৃথিবীতে যোগাযোগ ও করতে পারে। ঠিক যেমন আমরা ভ্রুণ দশায় থাকা কোন প্রাণীকে চাইলে রেকর্ড করতে পারি, ছবি তুলতে পারি। এমন কি শব্দ শোনাতে পারি। গর্ভে থাকা বাচ্চা কিন্তু সুন্দর মিউজিক শুনে সাড়া দেয়। চিৎকার, কান্না ইত্যাদি শুনলে সে কষ্ট পায়। জন্মাবার পরে অবশ্যই তা আর মনে থাকে না।
- তাতো হবেই, সে তো সে সময় তার মায়ের প্লাসেন্টায় যুক্ত।
- প্রতিটি মাত্রাই নাকি এরকম কোন না কোনভাবে যুক্ত। আর মৃত্যু এরকম একটা মাত্রা থেকে আরেক মাত্রায় প্রবেশ মাত্র। যদিও তখন আপনি আর আপনি থাকবেন না, আপনার এই জীবনের স্মৃতি থাকবে না। এখন মফুর কথা হল চাইলে এই জগত থেকেও কেউ কেউ পরের জগতে যোগাযোগ করতে পারে! আর এই যোগ টা হয় মূলত স্বপ্নের মাধ্যমে। আপনার সচেতন আর অবচেতন যখন মিলেমিশে একাকার। সবাই পারে না, কারো কারো ব্রেইন এরকম থাকে। তারাই মিডিয়াম। আর এই ক্ষমতা বাড়াতে কিছু ড্রাগ হেল্প করে। যেমন একটা প্রচলিত ব্যাপার আছে জানেন তো যে সিনথেটিক বেইজড ড্রাগ নিলে কারো কারো সেই মাতৃগর্ভের সময়ের কিছু স্মৃতি মনে পড়ে যায়? মফুও এরকম ভাবেই আরেক মাত্রায় যোগাযোগ টা করে।
- অথবা পুরোটাই এক ড্রাগ এডিক্টের মতিভ্রম। হাহাহা! ভালই মজা নিলেন ভাই যাই বলেন। আমি প্রায় বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম, গড!
- না, না, মজা নেইনি। আর আপনাকে এটা মানতেও বলছি না। তবে এটা মফুর দাবী। আর সে তার ভিশনগুলি কভাবে পায় আর আমার কেসে সাহায্য করে সেটা যতদিন অন্য কোন ভাবে ব্যাখ্যা না পাচ্ছি এটাকেই একটা ব্যাখ্যা ধরে রাখতে হচ্ছে।
- আপনি কি সত্যিই বিশ্বাস করছেন এটা?
- অবিশ্বাস ও করছি না। বিভিন্ন কেসে মফু আমাকে অদ্ভূত ভাবে সাহায্য করেছে। কোন একটা ক্রাইম সিনে গেলে সে আশে পাশের বিভিন্ন বস্তুর থেকে কোন একটা অদ্ভূত উপায়ে সূত্র বের করে। তার মতে সে নাকি একটা ‘সোয়াদ’ মানে স্বাদ পায়। কখনও গন্ধ কখনো মুখের স্বাদ, আর তা থেকেই পুরো ঘটনাটা, মানে ক্রাইমটা কিভাবে ঘটলো তা সে বলে দিতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে সেটা মিলেও যায়।
- ওকে, লং লিভ টু মফু
- ইয়েস!
-মেহেদী হক