এটাই ভালো হয়েছে কী বল?
চায়ে চুমুক দিতে দিতে সাদিয়া বলল
মাঝে মাঝেই আম্মুকে এখানে দেখতে আসতে পারবো।
হুম। কী উত্তর দেব জানি না, ভাল হয়েছে এটা বলাও কেমন আবার- না চল ওনাকে নিয়ে যাই এটাও বলা যাচ্ছে না।
আম্মু সবার সাথে মিলে মিশে থাকতে খুব পছন্দ করতো, খুব সোশাল ছিলো। এখানেও কত মানুষ তাই না?
হুম। আবার একই উত্তর দিলাম। উত্তর বা ঠেক দেয়া একটা শব্দ। কী করা যায় না বুঝলে আমরা যেই রকম করি আরকি। মেসেঞ্জার বা এস এম এস এ সেটা ইংরেজীতে মাঝে মাঝেই Hm হয়ে যায়।
চারদিকে অনেক গাছ। আর ঢাকার মধ্যেই, তাই না? ভাব যদি তাকে ঢাকার বাইরে রেখে আসতাম?
এটাই ভাল হয়েছে, আমিও এবার চায়ে চুমুক দিলাম।
আমার মাঝে মাঝেই ইচ্ছে করে এখানে এসে আম্মুর সাথে একটু শুয়ে থাকি। এটা করা যায় না, না?
হুম।
ভাব এখানেও আম্মু কিন্তু ঘুমিয়েই আছে। হাসপাতালেও যেমন ছিল। আসলে পারথক্য শুধু কথা বলা যাচ্ছে না, আর হাত টা ধরা যাচ্ছে না, আর দেখা যাচ্ছে না, আর... বলতে বলতে সাদিয়া আবার কাঁদতে লাগলো।
আজিমপুর কবরস্থানে আমাদের আম্মুকে রেখে যতবার ই আসি, প্রতিবার ই এরকম হয়। মাঝে মাঝে মনে হয় আস্তে আস্তে সয়ে যাবে, কিন্তু যায় না। এই ভয়াবহ ব্যস্ত শহরের মধ্যে একেবারে হঠাত সমতল নিশ্চুপ গোরস্তানে যেন কত বছরের কত মানুষের হাহাকার জমে আছে, কত মানুষ ছিল কিন্তু স্রেফ নেই হয়ে এখানে আছে, বা হয়ত এখানে নেই, হয়ত কোথাও নেই। কে জানে? কিন্তু কি আশ্চর্য করুণ সুন্দর জায়গাটা। সারি সারি সাদা সাইনবোর্ড, কত হাজার হাজার মৃত মানুষের নাম। কত তাদের ঠিকানা, চুনকুটিয়া, কেরানীগঞ্জ, চানখারপুল, নারায়ণগঞ্জ, আরমানীটোলা, মোহাম্মদপুর। সে সব ছাপিয়ে উঠে গেছে থোড়াই কেয়ার করা কিছু অশ্বত্থ, জারুল আর কদম। সেখানে ডাকছে বুলবুলি, ফিঙ্গে, শালিক।
ফিরতে ফিরতে আমারো তাই মনে হল।
মা কে হয়ত এখানে রাখাই ভাল হয়েছে।
No comments:
Post a Comment